স্বপ্ন রাতের তারা
- আবুল হোসেন খোকন
এক.
পশুর স্বর্গ হলো বন। আর মানুষের স্বর্গ হলো সম্পদ আর ক্ষমতা। কিন্তু আমার স্বর্গ আপার বাড়ি। এই বাড়িতে যা চাইবো তাই-ই পাবো। দু’হাত উজার করে দেবার জন্য আপা তৈরি আছেন। যদি বলা হয় আকাশে উড়বো, কিংবা চাঁদে যাবো- সঙ্গে সঙ্গে তিনি নেমে পড়বেন এ আয়োজনে। কি কি করতে হবে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। রকেট বা উড়োজাহাজ কোথায় পাওয়া যায় খোঁজ করবেন। যদি বলি আমেরিকা যাবো- আপা টিকেট কাটার জন্য ছুটবেন। এক কথায় যা খুঁশি তাই পাওয়া যাবে।
তিনি আমাকে বিরাট কিছু মনে করেন। কাছে পাওয়া মাত্রই হুলস্থুল বাঁধিয়ে দেন। বাড়িতে উৎসবের বন্যা বয়ে যাবে। একের পর এক খাবার তৈরি হবে। আর সেগুলো আমাকে খেতে হবে। টাকা-পয়সা যা আছে সব খরচ হতে থাকবে। যেন আপার কাছে আমি ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছু নেই। অবশ্য একা আপাই শুধু আমাকে নিয়ে তোলপাড় অবস্থা করবেন না, দুলাভাইও আরেকজন। তিনিও মহাউৎসাহে আপার সহেযোগী হবেন। সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যেই কয়েক ধাপ এগিয়ে চলবেন, ‘দেখেছো, ওর পাতে মাছের মাথা মাত্র একটা পড়েছে।’ ব্যাস, শুরু হয়ে যাবে মাথার পর মাথা গেলানোর পালা, ‘নাও নাও, খাও, যতো বেশি খাবে-বুদ্ধি ততো হবে।
বাড়িতে
আরও দু’টো চীজ আছে। এরা হলো আপার দুই কন্যা। বড়টা বিন্নি, দুলাভাই বিনু বলে ডাকেন। এবার ম্যাট্রিক দেবে। আর ছোটটা বনি, ডাকা হয় বুনু বলে। এবার এইটে। এই রত্ন দুটিকে আপার উপযুক্ত সৈনিক বলা যায়। আসলে এরা হলো Superintendent. আমার প্রতি আদর-যত্নে কোথায় কোথায় খুঁত আছে- কন্যাদ্বয় তা খুঁজে বের করবে। তারপর কৈফিয়ৎ তলব শুরু করবে আপার কাছে। আপা আরও ব্যতি-ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। দুই ভাগ্নিও আমাকে মহামূল্যবান সম্পদ মনে করে। এই সম্পদের দখল নিয়ে আবার দুইজনের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াইও আছে। বিনুটার কথা- এটা শুধু তার একার। এখানে কাওকে ভাগ বসাতে দেওয়া হবে না। আর বুনুটা ভাগ ছিনিয়ে নেবার জন্য বিভিন্ন রণকৌশল গ্রহণে ব্যস্ত। অবশ্য আমার দিক থেকে ভাগটার পাল্লা কোন একদিকে তো ভারী বটেই, তবে সেটা গোপনে। অপ্রকাশ্য। বলা যাবে না। কারণ তাহলে দুই ভাগ্নির মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। এমনিই সব সময় শীতল যুদ্ধ চলছেই। একবার বুনু পিছনে লাগলো। আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে সকাল থেকে গল্প করা শুরু করলো। ও আমার কাছ থেকে শুনলো অনেক কাহিনী আর কীর্তির কথা। মজার বিষয় হলো আমার সঙ্গে গল্পের আসর এমনভাবে চালালো যে- বাইরে থেকে মনে হলো না জানি কী শলা-পরামর্শ হচ্ছে! এবং সবই অত্যন্ত গোপনীয়, আর একান্তই বুনু ও আমার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে চলতে থাকলো। দুপুর বেলা খাবার সময়টুকু বাদে আবার চললো। বিকেল বেলা রোদের তেজ কমতেই শলা-পরামর্শের আসর আরও একটু নজরের আড়ালে সরিয়ে নেওয়া হলো। ছাদে বসা হলো। সন্ধ্যা পার হয়ে গেল, কিন্তু কথা চলতেই থাকলো। এরমধ্যে বার কয়েক বিনু উঁকি দিয়ে চলে গেছে। একসময় আসরের জায়গাটা আবার পাল্টানো হলো। বাড়ির পশ্চিম কোণায় পরিত্যক্ত জায়গা আছে। সেখানে কলা-বেল-শিমুলগাছ ছাড়াও নানান জোংলা গাছ-গাছালিতে ভর্তি। রাতের বেলা সেই গাছের মধ্যে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। চেয়ার এনে আরাম করে বসা হলো। তারপর নিভৃতে চললো আলাপের পর আলাপ। বুনু অবশ্য জায়গাটা এমনভাবে বাছাই করেছে- যেখানে বসার কারণে ঘর থেকে ছাদে ওঠা-নামার সময় আমাদের চোখে পড়ে।
বিনু কয়েকবার সেই জায়গা দিয়ে ছাদে ওঠা-নামা করলো, কিন্তু একবারও আমাদের ডাকলো না। শেষে যখন ঘরে ঢুকে আবারও আলাপে বসলাম- তখন আপার কাছে জোরালো নালিশ হয়ে গেল। বিনু সংক্ষিপ্ত অভিযোগ করলো যে, ‘তাকে আদর করা হচ্ছে না, আমি এড়িয়ে চলছি’। আরেকদিনের
ঘটনা। বুনু হাসতে পারে। এই স্বভাবটার কথা যদি আপা ওর জন্মের আগে জানতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই নাম বুনু না রেখে হাসু রাখতেন। দুপুরবেলা খাবার টেবিলে বসেছি। দুই ভাগ্নি, আপা, দুলাভাই সবাই আছি। গভীর মনোযোগে খাওয়া চলছে। হঠাৎ বুনু হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো। বললো, ‘জানেন মামা, রাত আড়াইটার দিকে উঠেছিলাম। তারপর মনে করলাম আপনাকে ডেকে তুলি। কয়েকবার চিন্তা করলাম। হাঁটাহাঁটি করলাম। কিন্তু ডাকলাম না। আপনি উঠলে, আইসক্রিমগুলো শেষ করে ফেলতাম।’ সন্ধ্যেবেলা দুলাভাই দুই পাউন্ড আইসক্রিম নিয়ে এসেছেন। তার অল্পই খাওয়া হয়েছে। বাকিটা কেও যাতে খেতে না পারে- সেজন্য ফ্রিজে আটকে রাখা হয়েছে। রাত আড়াইটায় বুনু ডেকে তুললে দারুণ হতো! ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার, দুজনে ইঁদুরের মতো চুকচুক করে আইসক্রিম খেতাম। সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকতো। আমাদের মধ্যে চোর চোর একটা ভাব কাজ করতো। এক সময় আইসক্রিমের পাত্র শূন্য হয়ে যেতো। ব্যাপারটা দারুণ মজার হতো! সকালে উঠে সবার চোখ কপালে উঠতো, বেকুব বনে যেতো। বুনুর কথায় জবাব দিলাম, ‘ডাকলে না কেন? আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়তাম।’ আপা হইহই করে উঠলেন। দুলাভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘দেখেছো দেখেছো ওদের কান্ডকারখানা! কী সাংঘাতিক!’ দুলাভাই খেয়েই চলেছেন। বুনু হাসছে। আর বিনু গম্ভীর। ঝড়ের আলামত দেখে যেমন বোঝা যায় বৈশাখ মাস, তেমন বিনুর ভাব দেখে বোঝা যায় পরিস্থিতি বিপদজনক! আমি কখনও বিনুকে বিনু বলে ডাকি না। আসল নামেই ডাকি। আর বিনুও আমাকে শুধু মামা ডাকে না, নাম যোগ করে ডাকবে। আপা কতোবার নাম ধরে ডাকতে নিষেধ করেছেন- কোন কাজ হয়নি। আপার ধমক খেয়ে ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেছে, তারপর আগের মতোই নাম ধরে ডেকেছে। এনিয়ে আমার অবশ্য মাথা ব্যাথা নেই। বরং ভালোই লাগে। নাম ধরে ডাকার মধ্যে একটা আপন আপন ব্যাপার আছে। তাছাড়া এমনিতেও ওর-আমার কোন ভিন্নতা নেই। আমাকে Fill করাটায় ও-ই প্রথম। একবার সামান্য জ্বর হয়েছিল আমার। আপার কাছে চিঠি লোখার সময় কথায় কথায় এ বিষয়টা তাঁকে জানিয়েছিলাম। ও বাবা, খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন! অথচ জ্বরের কথা অনেক আপনজনই জানতো! কেও খবর নেয়নি! বিনুর জন্য ফোন করাটা কম ঝামেলার নয়। বাড়িতে তো ফোন নেই। বেশ দূরে যেতে হয় দুলাভাইয়ের অফিসে। একা ওর পক্ষে বের হবার উপায় নেই। সুতরাং আপা অথবা দুলাভাইকে সঙ্গে নিতে হয়েছে। সঙ্গে নিতে আবার দু’জনেরই সময় বের করা কম কথা নয়। সময় বের করানো, তাঁদের রাজী করানো- নানা ব্যাপার আছে। সেগুলো করতে হয়েছে। ফোনটা করা হয়েছিল সন্ধ্যারাতে। এ সময় দুলাভাইয়ের অফিস খোলা থাকে না। নিশ্চয়ই এরজন্য রুম খুলতে পিয়নকে খুঁজে বের করতে হয়েছে। তাকে চাবি আনাবার জন্য পাঠাতে হয়েছে অফিসারের বাড়ি। দুলাভাইও অফিসার, কিন্তু তাঁর কাছে চাবি থাকে না। এ থেকে বোঝা যায় এক’শ মাইলেরও বেশী দূরে একলা পড়ে থাকা এই মামার জন্য ভাগ্নিটির কী পরিমাণ Fillings. অবশ্য যখন ফোন করেছিল, তখন আমার জ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া আমিও ফোনটা ধরতে পারিনি। অফিসে ছিলাম না বলে এক স্টাফ ধরেছিল। তার কাছ থেকেই বিনু আমার খবর নিয়েছিল। আর দিয়েছিল নিজের Message- টা।
Fillings-এর আরও উদাহরণ আছে। বিনু আমাকে একটা পয়সাও খরচ করতে দিতে রাজী নয়। নিজের আনন্দের জন্যেও নয়। একবার ওর সঙ্গে নিউমার্কেটে গেছি। আগেই জেনেছি গুদালী’র ক্যাসেট ওর খুব পছন্দ। অনেক খুঁজেছে, কোথাও পায়নি। আমি ঢুকে পড়লাম একটা ক্যাসেটের দোকানে। পেয়েও গেলাম গুদালী। তারপর সে কী অবস্থা! বিনু কিছুতেই কিনতে দেবে না সেটা। ‘লাগবে না’ ‘অ- তো দাম’ ‘বান্ধবীর আছে, কিনতে হবে না’- ইত্যাদি সব কথার খই ফুটছে ওর মুখে। দোকানদার ওর মরিয়া চেষ্টা দেখে থ হয়ে গেল। আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া দোকানদারের সামনে দিব্বি টাকা রেখে ক্যাসেট নিয়ে নিলাম। আপা প্রায়ই এসব নিয়ে মজা করেন। তিনি কখনই আমার টাকায় কিছু কিনতে বলবেন না। কিন্তু বিনুর সামনে আমাকে বলবেন, ‘ভাইটা আমার, মালাই বরফ খাওয়াবে?’-বলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসি চাপবেন। আর বিনু রসগোল্লার মতো চোখ দু’টো দিয়ে আপাকে ভস্ম করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আপা হয়তো বলবেন, ‘সোনা ভাই আমার, যাও তো কল (টিউবওয়েল) থেকে দুই বালতি পানি নিয়ে এসো। তোমার দুলাভাই নেই, আমার শরীরটা ভাল লাগছে না।’ ব্যাস, গর্জে উঠবে বিনু, ‘মামার তো ঠান্ডা লাগবে, আমি যাচ্ছি।’ আপা মিটিমিটি হাসছেন। এরকম অনেক ঘটনা। এই বাড়িতে আমার কোন কাজ করার উপায় নেই। পয়সা খরচ থেকে শুরু করে দুঃচিন্তা করারও উপায় নেই। আর এ সবের জন্য আপা প্রায়ই ঠাট্টা করেন, ‘হুঁ, Partiality,
partiality, সব কাজেই partiality।’ বিনু বলে, ‘দ্যাখো মা, মামা আমাকে বেশী ভালবাসেন। তাই সম্পর্ক বেশী। তোমরা ইয়ার্কি মারবে না।’ এবার আমার কথা কিছু বলা যাক। একটা অন্য প্রকৃতির মানুষ আমি। অতীন্দ্রিয় ব্যাপার-স্যাপারে উৎসাহী। ছোটবেলায় তো সবাই পাগল মনে করতো। কারণ হলো, প্রায় সব সময়ই আমি মানুষের স্তর থেকে বেরিয়ে যেতাম। বেশীরভাগ সময় পোকা-মাকড়, জন্তু-জানোয়ারে পরিণত হতাম। কখনও মুরগি হয়ে যেতাম, কখনও বড় বাক্সে ডুকে মুরগির ডিমে তা দিতে বসতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনভর পর্যন্ত মুরগি হয়ে থাকতাম। কেও খুঁজে বের করে মানুষের স্তরে না নিয়ে আসা পর্যন্ত কাজ হতো না। কখনও গাছ হয়ে বাড়ির এককোণায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতাম। যখন পাখি হতাম, তখন পেয়ারাগাছের মগডালে উঠে মুখ দিয়ে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে পেয়ারা খেতাম। আবার যখন ব্যাঙ হয়ে যেতাম, তখন ঘরের অন্ধকার কোণায় বা খাটের নিচে বসে থাকতাম। একবার গরু হয়ে অনেক ঘাস খেয়ে ফেলেছিলাম। তারপর কী অবস্থা! ডায়রিয়া হয়ে যাই যাই পরিস্থিতি। আমার একটা মাকড়সার খামার ছিল গভীর জঙ্গলে। অন্য জায়গা থেকে মাকড়সা ধরে ধরে সেখানে এনে ছেড়ে দিতাম। ওরা জাল পেতে দিব্বি বাসা বানাতো। সারাদিনে আমার কাজ ছিল পোকা ধরে ওদের খাবার সংগ্রহ করা। খাবার এনে জালে ফেলে দিতাম। মাকড়সাগুলো আয়েশে সেগুলো শরীরের ভেতর থেকে বের করা এক রকম সাদা সাদা ফিতার মতো বের করে তা দিয়ে পোকাগুলোকে পেঁচিয়ে ফেলতো। তারপর আস্তে আস্তে ফিতা ছাড়িয়ে পোকার মস্তক এবং পরে দেহ খেয়ে ফেলতো। আমি ওদের সব কথা বুঝতে পারতাম। কখন ক্ষুধা লাগে, কখন অলস লাগে- সব বুঝতাম। ওদের সঙ্গে কথা বলতাম দিব্বি। কখনও কখনও দুঃখ পেয়ে ওদের চোখ ভিঁজে যেতো। তখন আমার চোখ দিয়েও ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়তো। ওদের দুঃখ আমি বুঝতে পারতাম এবং মাকড়সার স্তরে চলে যেতাম। একবার ভুল করে একটি মাকড়সা মেরে ফেলেছিলাম। মাটিতে চড়ে বেড়ানো এই মাকড়সাটির পিঠে উঁচুমতো একটা কিছু খুঁচিয়ে পরিস্কার করতে গিয়েছিলাম। আসলে উঁচুমতো ওই জিনিসটা ছিল গুটিয়ে রাখা বাচ্চাদের পিন্ড। অসংখ্য বাচ্চা ছিল ওই পিন্ডে। এই শ্রেণীর মাকড়সার বাচ্চারা মায়ের পিঠে চড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য হিসেবে মায়ের শরীরকেই আস্তে আস্তে খেয়ে ফেলে। একসময় মা মারা যায়। উঁচু জায়গাটি পরিস্কার করতে গিয়ে আমার হাতে ওই মাকড়সাটি মারা গিয়েছিল। তারপর আমার কষ্টের শেষ নেই। কতোদিন গোপনে চোখের পানি ফেলেছি! কথাটা মনে হলে এখনও ভিতরটা হাহাকার করে ওঠে। ছোটকালের ব্যাপারগুলো থেকে এখনও যে মুক্ত হয়েছি- তা নয়। বরং অনেক সময় বেশী বেশী অতীন্দ্রিয় হয়ে উঠি। যেমন একটু চেষ্টা করলেই যে কোন প্রাণীর ভিতরে ঢুকে যেতে পারি। তখন ওই প্রাণীটি যা চিন্তা করে, আমিও তা চিন্তা করি। সে যা দেখে, আমিও তা দেখি। আসলে আমি নিজেই প্রাণী হয়ে দেখি, ভাবি, অনুভব করি। মানুষও প্রাণী, তাই মানুষের বেলায়ও একই ঘটনা। চেষ্টা করলেই কোন মানুষের ভিতরে ঢুকে যাওয়া যায়। এবং তখন তার চোখ দিয়ে আমি দেখি, তার চিন্তা দিয়ে আমি চিন্তা করি। মানুষের ভিতরটা জানতে আমার কোন সমস্যা নেই। মনোবিজ্ঞানে এই ক্ষমতাকে বলা হয় অতীন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ বা Extra sensory
perception- সংক্ষেপে E.S.P.। আমি প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারি যে পদ্ধতিতে তার নাম Mental telepathy। বিজ্ঞান বলে, ‘নিজের বাইরে জগতের উদ্দীপকসমূহ ইন্দ্রিয়ের গ্রাহক কোষে আঘাত করে, অর্থাৎ কোন উদ্দীপক থেকে বিচ্ছুরিত পার্থিব শক্তি বা Physical energy সংগ্রাহক
কোষের সংস্পর্শে এসে দৈহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার সংবাদ মস্তিষ্কে উপস্থিত হলে আমরা উদ্দীপকটির উপস্থিতি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করি।’E.S.P.-এর জন্য নিজেকে অবশ্যই সম্মোহিত হতে হয়, গভীর স্তরে পৌঁছুতে হয়। আমার বেলায় চেষ্টা করলে এটা বেশ দ্রুত করা সম্ভব। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি আরেকজন চলমান মানুষের চিন্তা (Thought
reading), পরিকল্পনা (Telepathy), ভবিষ্যৎ
(Foresight), চোখের দেখা (Clairvoyance),
তার কথা (Clair audience)
বুঝতে পারি। আমার আপনজনদের আমি এই পদ্ধতিতেই দেখি, খোঁজ নেই। আপা আর বিনুদের বেলায়ও তাই করি। আসলে আমি থাকি সমস্ত প্রিয়জন থেকে অনেক অনেক দূরে। জন্মভূমি, মাটি, সুন্দর অতীত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই দূরত্ব আর অভাব আমাকে টেনে নিয়ে গেছে অতীন্দ্রিয় জগতে। এ জগতে গিয়েই ফিরে পেতে হয় সুখ, আনন্দ, সঙ্গ। এগুলো অমূল্য সম্পদ। যা মনকে বাঁচিয়ে রাখে।
----------- চলবে--------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message