স্বপ্ন রাতের তারা
- আবুল হোসেন খোকন
দুই.
আপার বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ যাওয়া হবে বহুদিন পর। কিন্তু যেতে হলে একটা পরিকল্পনা ঠিক করা জরুরি। অনেক কিছু সামলানোর পর অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে অনেকগুলো পর্যায়ও অতিক্রম করতে হবে। তারপরই-না মিলবে সফলতা।
অফিস থেকে বেশীদিন ছুটি নেওয়া একটা বড় সমস্যা। ছুটি পাওয়া না-ও যেতে পারে। আবার পেতে হলে অন্ততঃ দু’মাস আগে থেকে জানাতে হবে। দু’মাস পর নির্দিষ্ট তারিখে যাওয়া হবে কি না- তা নিয়েও সন্দেহ থাকবে। যে কোন মুহূর্তে কর্তৃপক্ষের কোন অসুবিধা হতে পারে। তখন ছুটির তারিখ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সুতরাং নিশ্চিত করে তারিখ ঠিক করার যেমন উপায় নেই, তেমন পরিকল্পনাকে খাপে খাপে মিলিয়ে এগুনোও সম্ভব নয়। তাছাড়া বড় ছুটি নিয়ে আপার বাড়িতে গেলে খালা রেগে যাবেন। তিনিও আপার মতো চান আমি যেন তার কাছে যাই। দারুণ ভালবাসেন তিনি। কিন্তু ভাগ ভাগ করে তো আর দু’জায়গায় যাওয়া যায় না। তাহলে আনন্দটা ভেঙে যাবে। ছুটির পরিপূর্ণ আনন্দ পাওয়া যাবে না। তাছড়া কিছু বন্ধু আছে আমার। তাঁদের সঙ্গে মিলিত হওয়াটাও জরুরি। সমস্যা হলো একবার বেশীদিনের ছুটি নিলে অনেকদিন আর কোথাও যাওয়া হবে না। কারণ খুব তাড়াতাড়ি আর ছুটি মিলবে না। অবশ্য ইচ্ছে করলে দুই-একদিনের ছুটি নিয়ে, কিংবা সরকারিভাবে ঘোষণা করা ছুটির দিনগুলোতে হুট করে না বলে-কয়ে চলে যেতে পারি আপার ওখানে। কিন্তু তাতে আসল মজাটা পাওয়া যাবে না।
আগে থেকে জানিয়ে গেলে আপা একটা বিরাট আয়োজন করে রাখবেন। ঠিক বড় কোন মন্ত্রীর আগমনের মতো ব্যাপার। আপা যখন জানবেন আমি যাবো, তার আগে তিনি চাকর-বাকরকে ছুটি দিয়ে দেবেন। বাইরের কাওকে বাড়িতে রাখা হবে না। বাইরের কেও থাকলে খোলামেলা আনন্দে সমস্যা হয়। আমার আগমন উপলক্ষ্যে আরও যা করা হবে তা হলো- বাড়ি-ঘর সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা হবে। পিঠা, ঘি, বিভিন্ন আইটেমের রান্না, মিষ্টি জাতীয় ভাল ভাল খাবার ও আনুসঙ্গিক জিনিস-পত্র আগে থেকে ফ্রিজে জমানো শুরু হবে। স্বামী বা কন্যাদেরকে এর কোনটাই হাত দিতে দেবেন না আপা। ভাল ভাল খাবার থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে সবাই। আমি যাবার পরই কেবল মহা-ধুমধাম করে একসঙ্গে সবাই খেতে পারবে। এছাড়া আমি যাবার একমাস আগে থেকে দুলাভাই বাজার-সদাই করতে থাকবেন। এখানেই শেষ নয়। আরও যা থাকবে তা হলো- বেড়ানোর পর্ব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর একটা কর্মসূচি প্রণীত হবে বিনু, বুনু, আপা আর দুলাভাইয়ের যৌথ পরিকল্পনায়। এরসঙ্গে আমি যদি চাঁদে বেড়াতে যাবার মতো কোন কর্মসূচি পেশ করি- তাহলে তো কথাই নেই। সবমিলে সে এক মহা-ধুমধামের ব্যাপার হবে। সুতরাং আমার হুট করে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। একটা লম্বা সময়কে সামনে রেখে এগুতে হবে।
সাত দিন লাগলো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে। আসছে ঈদটাই হবে আপার বাড়ি যাবার সময়। এমনিতে তিনদিনের সরকারি ছুটি থাকবেই। তারসঙ্গে দুই-তিনদিন বাড়িয়ে নিতে পারলেই হলো। স্মরণীয়-বরণীয় সময়কে সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সূতোর অনেক গিট খুলতে হবে। যাবার পথে যতো খাঁদ, কাটা-ফাঁড়া আছে- সব দূর করতে হবে। এসব ভেজাল পাশ কাটিয়ে যে যাওয়া যায় না তা নয়। যায়, তবে সে রকম কাজ হবে দূর্বল বা অসুস্থ প্রকৃতির। যা শুধু বিজয়কে ক্ষতিগ্রস্তই করে না, অনেক সময়ও ধ্বংস করে। কাজেই আমি কোন জটিলতা রেখে এগুতে পছন্দ করি না। টুকিটাকি যতো কাজ আছে এরমধ্যে সাড়তে হবে। কণা খালার বাড়িতে যেতে হবে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কাজসহ অফিসের যতো ঝামেলা আছে- সব শেষ করতে হবে। তারপর নিশ্চিন্ত পথ ধরে পৌঁছে যাবো আপার কাছে। হুররে! কী মজা, কী মজা!
তিন.
রুমমেটটা বিদঘুটে টাইপের। কোন দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না। উটকো সব ঝামেলা তৈরি করে। রুমমেট বলা যায় এই অর্থে যে, আমরা একই জায়গায় থাকি। তিন রুমের একটা ফ্লাট। তিনজন থাকি তিন রুমে। মেস সিস্টেমে খাওয়া।
এই রুমমেটকে ম্যানেজার বলা যায়। কারণ মেস সিস্টেমে বাজার খরচের দায়িত্ব যার হাতেÑ সেই ম্যানেজার। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কোন ম্যানেজার নেই। আছে মুখে মুখে। আমরা তার কাছে টাকা জমা দেই, সে-ই সব খরচ চালায়। তার টাইপটা হলো এই রকম- ধরা যাক রান্নাঘর বা বাথরুমের ইলেকট্রিক বাল্ব কেটে গেল। সে বলবে, ‘ইহ্ হি রে, বাল্বডা কাইট্যা গেল। আরেকটা আনা লাইগবো।’ তারপর একদিন যাবে, দুইদিন যাবে- বাল্ব আনবে না। ‘কী ব্যাপার’- জিজ্ঞেস করলেই বলবে, ‘আন্মুনি, আইজই আন্মুনি।’ আজ যাবে, কাল যাবে, মাস যাবে- কিন্তু সে আর ওই বাল্ব কিনবে না। শেষ পর্যন্ত আমাকেই টাকা খরচ করে তা নিয়ে আসতে হবে।
তারপর হয়তো তেলাপোকার ব্যাপার। রান্নাঘরে গরমের দিনে রাজ্যের ইয়া মোটা মোটা লোমশ তেলাপোকা এসে ঘোরাঘুরি করবে। তাড়ালেও যাবে না। তরকারির পাতিল, চামচ, প্লেট ইত্যাদিতে নাছোর বান্দার মতো চাটাচাটি করবে। এগুলো উঠে আসে ল্যাট্রিনের টয়লেট থেকে। ছিঃ! রুমমেটটি তেলাপোকা দেখে তেমন গুরুত্ব দেবে না। আমরা বললে বলবে, ‘আজই নকরোজ কিন্যা আন্মুনি।’ কিন্তু তার আজ আর শেষ হবে না। শেষ পর্যন্ত আমাদেরই তা আনতে হবে। লোকজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েও ওরকম করবে। নেবার সময় ‘সাত দিনের মধ্যে দিচ্ছি’ বলে নেবে। কিন্তু সাত মাসেও আর দেবে না। এই টাইপটা হলো চেয়ারম্যান-মেম্বারদের। তারা এই রকম। ওর শরীরে সেই রক্ত আছে কি না- কে বলবে! হয়তো বাবা বা আত্মীয়-স্বজন চেয়ারম্যান-মেম্বার ছিল বা আছে। শুনিনি কোন দিন। তারপর দায়-দায়িত্ব, সময়জ্ঞান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা- এসব ব্যাপারেও হাজার খুঁত। খাবার পর থালা-বাসন এলোমেলো করে ফেলে রেখে যাবে। কখন কাজের বুয়া আসবে, তখন পরিস্কার হবে। ততোক্ষণে সেগুলো দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করবে। ঘর-দোর-আসবাবপত্র এসবও গুছিয়ে পরিস্কার রাখতে জানে না। ল্যাট্রিনের কাজ করে ফ্লাশ করবে না। আলো থাকা সত্ত্বেও বাথরুমের লাইট জ্বেলে ঢুকবে, কিন্তু বেরিয়ে এসে আর নেভাবে না। জ্বালিয়েই রেখে যাবে। যার দেশপ্রেম আছে- সে নিশ্চয়ই কখনও কোন সম্পদের অপচয় করবে না। অথচ এসব দায়িত্ব তার নেই।
উটকো ঝামেলা ঘাড়ে নিতে তার বাধে না। যে কেও যদি বললো, ‘ভাই আমার অমুক কাজটা হচ্ছে না, একটু সাহায্য করবেন?’ অমনি সে রাজী হয়ে যাবে এবং সাহায্য শুরু করবে। তাই বলে লোকটার কাজ কখনও হবে না। বরং আগে যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তাও বানচাল হয়ে যাবে। কয়েক মাস আগে এক লোক দু’দিনের জন্য তার কাছে থাকতে চেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সে নিয়ে বাসায় উঠিয়েছে। দু’দিন থাকার পর লোকটা সাতদিন থাকতে চাইলো। তারপর আর সে দিনক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলেনি। পুরো ছয়মাস থেকে গেছে। তাও আমরা রীতিমতো বিদ্রোহ শুরু না করলে সে কোনদিন যেতো কি না- কে জানে!
এই রুমমেট প্রেম করে এক মেয়ের সঙ্গে। প্রেম করেছিস বিয়ে কর্, তারপর তাকে এনে নিজের কাছে রাখ্। তা না! সে ওই মেয়েটিকে রাতে-দিনে যখন খুঁশি এনে ঘর আটকিয়ে কথা বলবে। একটি ব্যাচেলর ফ্লাট, আশে-পাশে ফ্যামেলি থাকে, লোকে কী ধারণা করবে? এসব তার খেয়াল নেই।
মানুষের বসবাসটাই যেন জটিল সব ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে। আমি তা থেকে কিছুতেই ভিন্ন হতে পারি না। এর আগে যেখানে থাকতাম, সেটাও একটা মেস ছিল। জেনিথ মেস। এখানকার চেয়ে তার অবস্থা ছিল একেবারেই খারাপ। কাঁচা মেস। আমার রুম শেষের দিকে। পাশের রুমে থাকেন এক স্কুল মাস্টার। নাম হামিদ। তিনি বাজারে যেতেন। চার আনা দিয়ে এক ভাগা মাছ কিনে আনেন। অথচ তখন ওরকম গুড়ো মাছের ভাগার স্বাভাবিক দাম কম হলেও তিন টাকা। কীভাবে যে সেই ভাগা চার আনায় আনতেন তিনিই জানেন। এসেই বলবেন, ‘ভাই সাহেব, চার আনায় এক গাদা মাছ পাইছি।’
- চার আনা! বলেন কি?
- ‘হ্যাঁ, কী মনে করেন আমাকে? মাছ আলাক কইলাম, চার আনায় দ্যাও দ্যাও, না দ্যাও থাকুক। পঁচুক তোমার মাছ।’
- ‘তারপর? দিয়ে দিলো?’
- ‘হ্যাঁ, বলেন কি? বাপ বাপ করে দিয়ে দিলো। দিবে না? ইয়ার্কি?’
মাস্টার সাহেব ওই মাছ নিজে হাতে ধুতে যাবেন। তার আগেই পঁচা গন্ধে বমি হবার উপক্রম সবার। তিনি একপোয়া ওজনের মাছ যখন ধোয়া শেষ করবেন, তখন থাকবে আধা ছটাক মতো। সে মাছ মহা-আনন্দে রান্না করবেন, খাবেন। তারপর তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বলবেন, ‘ভাই সাহেব, দারুণ হইছে। আপনি একটুখানি খাইয়া দেখতে পারেন। আনবো নাকি?’
- ‘না, দরকার নেই। আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।’
- ‘আরে ভাই তাতে কী আছে? খাওয়ার জন্যিই তো দুনিয়া। খাওয়ার কোন শ্যাষ নাই। সব হজম হয়া যাবি। এহন খাইবেন, ইটু পরই শ্যাষ। আবার খাইবেন, আবার শ্যাষ। আমি নিয়া আসি ভাই সাহেব।’
- ‘না, আমি খাবো না।’
তিনি হয়তো হতাশ হয়ে বলবেন, ‘আচ্ছা, না খালি আর কী করা! খিদ্যা লাগ্লি চাইয়েন কিন্তু।’
আমি ‘আচ্ছা’বলে রক্ষা পাই। কখনও কখনও আলসেমি করে অথবা টাকা-পয়সার ঘাটতি থাকলে রান্না করবে না। অভূক্তই শুয়ে পড়বে। আর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে ডাকা শুরু করবেন আমাকে।
- ‘ভাই সাহেব, ও ভাই সাহেব, ঘুম আইছেন নাকি?’
আমি ‘হু’ বলে পাশ ফিরি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার-
‘ভাই সাহেব, ও ভাই সাহেব। খিদ্যা লাগলো যে। কী করি কন্তো?’
- ‘ঘুমান, ঠিক হয়ে যাবে।’
- ‘ঘুমাবো?’
- ‘হ্যাঁ, ঘুমান।’
- ‘আচ্ছা।’
আবার কিছুক্ষণ পর, ‘ভাই সাহেব, ও ভাই সাহেব?’
- ‘বলুন।’
- ‘ঘুম যে ধরে না?’
- ‘উঠে, এক গ্লাস পানি খান, ঠিক হয়ে যাবে।’
- ‘পানি খালি পড়ে খিদ্যা যাবিনি?’
- ‘হ্যাঁ, কমবে খানিকটা।’
উনি উঠে পানি খাবেন। তারপর আবার কিছুক্ষণ পর শুরু করবেন, ‘ভাই সাহেব, চাল আছে অল্প বুজলেন না? মনে করল্যাম, থাকুক। এক রাত না খালি কী হবি? সকালে রান্না করবোনে, গরম গরম ভাত খায়া ইস্কুলে যবোনে। কিন্তু এহন তো আর খিদ্যা যায় না! এক কাম করি ভাই সাহেব’-
- ‘করুন।’
- ‘একমুট চাল খাই। না কী কন্? চালও যা, ভাতও তাই। চাল থিক্যাই তো ভাত হয়। কী কন্?’
- ‘খান্। চাল খান্।’
উপসাগর যুদ্ধের সময় তখন। ইরাকের ওপর গোটা বিশ্বকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমেরিকা। মাস্টার সাহেবের সঙ্গে দেখা হলেই বিপদ। দিনে দেখা হতো না। অনেক রাতে ফিরতাম। সবাই ঘুমিয়ে। মাস্টার শুয়ে থাকলেও জেগে থাকতেন।
- ‘আসলেন নাকি ভাই সাব?’
- ‘জ্বী, এলাম।’
- ‘আজকের খবর কি ভাই?’
- ‘কীসের?’
- ‘সাদ্দামের। হারামজাদা বুশটাক্ বসান দিতাছে নাকি আরও?’
- ‘কই? না। তেমন কিছু জানি না তো।’
- ‘কোন চিন্তা নাই ভাই সাহেব। এর নাম সাদ্দাম! শালা বুশ ঘুঘু দেখ্ছে, ফাঁদ দ্যাহে নাই। এইবার সাদ্দামের হাতে পড়ছে। আর বুশের নিস্তার নাই। বুঝলেন? আর নিস্তার নাই।’
- ‘জ্বী।’
- ‘আচ্ছা ভাই সাহেব, আপনি তো জ্ঞানী লোক, ভবিষ্যৎ-টবিষৎ বইল্যা দিবার পারেন। কন্তো দেহি, যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পারবি কেডা? সাদ্দাম পারবি তো?’
এই হলো মাস্টার সাহেব। এ রকম আরও কতোজন দেখেছি। কতো জায়গায় থেকেছি, আর কতো রূপ দেখেছি। এখন এসে পড়েছি ফ্লাটে। অবশ্য আগের চাইতে অনেক উন্নতি হয়েছে আমার। না হলে ভাঙা মেস থেকে আধুনিক ফ্লাটে আসা হতো না। দিন দিন খুব ঘরমুখো হয়ে পড়েছি। দরজা-জানালা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে নিজেকে ভাল লাগে। নিরাপদে অনেক কিছু ভাবা যায়।
আমার একটা ক্যাসেট প্লেয়ার আছে। নিঝুম-নিস্তব্ধ ঘরে প্লেয়ার চালু করে দিয়ে কল্পনায় চলে যাওয়া যায় অনেক দূরে। ইতিহাসের গভীরে। রেকর্ড বাজে ভুপেন হাজারিকার কণ্ঠে-‘আমি এক যাযাবর, পৃথিবী আমাকে আপন করেছে ভুলেছি নিজের ঘর। আমি গঙ্গা’র থেকে মিসিসিপি হয়ে ভল্গার রূপ দেখেছি, অটোয়া’র থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি, আমি ইলোরা’র থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো শহরে দিয়েছি, গালিবের শের তাশখন্দের মিনারে বসে শুনেছি, মার্ক টুয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কীর কথা বলেছি, বারে বারে আমি পথের টানেই পথকে করেছি ঘর, তাই আমি যাযাবর। বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন আমার রয়েছে পণ, রঙের খনি যেখানে দেখেছি রাঙিয়ে নিয়েছি মন, আমি দেখেছি অনেক গগনচুম্বি অট্টালিকার সারি, তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নর-নারী, আমি দেখেছি অনেক গোলাপ বকুল ফুটে আছে থরে থরে, আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা ঝরে গেছে অনাদরে, প্রেমহীন ভালবাসা বেসে ভেঙেছি সুখের ঘর, পথের মানুষ আপন হয়েছে আপন হয়েছে পর, তাই আমি যাযাবর -------’
-------- চলবে-----------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message