শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

স্বপ্ন রাতের তারা, আশির দশকের ধারাবাহিক গল্প (পর্ব-৮)

 

স্বপ্ন রাতের তারা

আবুল হোসেন খোকন

 

এগারো.

সকালেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল সকালে মেজাজ খারাপ হওয়ার মানে হলো দিনটাই খারাপ মেজাজের ওপর দিয়ে যাওয়া সবকিছু গোলমাল হয়ে যাওয়া

সকাল সকাল বেরুতে হবে বলে ভোরে উঠেছিলাম গোসল-টোসল করে বাথরুম ফ্রি করে দিতে পারলে অন্যদের কোন সমস্যা থাকে না, নিজেও সারাদিনের জন্য নিশ্চিন্ত থাকা যায় দাড়ি উঠে এক বিশ্রী অবস্থা হয়েছে মুখের শেভটা করেই গোসল করার ইচ্ছে ছিল রেজার-টেজার কিছু আনিনি আছে নতুন এক সেভেনও ক্লক বেø তারপর শেভিং ক্রিম, ব্রাশ এসব কিছুই আনা হয়নি খালুর আছে, কিন্তু সেগুলো আনতে যাওয়া লজ্জার ব্যাপার তাছাড়া এসব শেভ-টেভের কাজ কাওকে জানান দিয়ে করতে পারি না বলা যায় গোপনেই সেরে ফেলি ফিটকিরি-লোশন এসবও নেই আয়নাও নেই ঘরে ব্যাগে একটা খুঁদে গোল আয়না ছিল টাকা দিয়ে অনেক দিন আগে ফুটপাত থেকে কিনেছিলাম এতোদিনে তার মারকারি উঠে যা-তা অবস্থা! মুখ দেখাই যায় না এটার ভেতর তাকালে চেহারা দেখা যায় তিন-চার রকম, ঢেউ খেলানো রং- পাল্টিয়ে দেয় ফর্সা মানুষকে শ্যামবর্ণ দেখায় আর আমি তো শ্যামবর্ণই এই আয়নায় দেখা যায় কালো কুঁচকুঁচে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়

এই আয়নাটাই অনেক কায়দা-কানুন করে জানালার গ্রিলের কাছে দাঁড় করালাম ঘরে পেলাম গায়ে মাখানো একটা সাবান গ্লাস থেকে পানি লাগিয়ে ওটা দিয়েই শেভিং ক্রিমের কাজ চালাতে হলো শেভটা তাড়াতাড়ি করা দরকার খালা-খালু-সুষম-শুচিরা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি উঠে পড়ার আগেই ঝামেলা শেষ করতে হবে না হলে আবার সমস্যা হতে পারে ভয় হলো এই তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আবার মুখটাই কেটে না যায় কিন্তু দেখা গেল মুখ-টুখ তেমন কাটেনি, গন্ডগোল বাঁধিয়েছে গোঁফটা বাম পাশেরটা বেশী কেটে ফেলেছি ওপরে উঠে গেছে মহা মুশকিল! এখন ডান পাশেরটা ওই সমান করতে গেলে হিটলারের গোঁফ হয়ে যাবে একটু একটু করে কমিয়ে কোন রকমে মেকআপ করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছি হচ্ছে না শেষ পর্যন্ত দুই পাশে সমান পরিমাণই কাটতে হলো একেবারে হিটলারের মতো না হলেও কাছাকাছি চলে গেছে লোকজন না হাসলেই হয় মনকে অনেক করে বোঝালাম, আরে মিয়া, তুমি তো এভাবেই গোঁফ রাখো তোমার গোঁফ তুমি যেমন খুঁশি তেমন রাখবে, তাতে অন্যের কি? কোন চিন্তা করো না তোমার গোঁফ পছন্দমতই আছে স্বাভাবিক আছে কেও কিছু বলতে যাবে না সব লোকজন তো আর তোমাকে চেনে না যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে

-কিন্তু যারা চেনে?

-আরে মিয়া, যারা চেনে তারা তোমাকে অনেকদিন পর দেখছে মনে করবে এটাই তোমার স্টাইল হয়ে গেছে নো চিন্তা ডু ফুর্তি

-কিন্তু শুচি-সুষম? ওরা তো দিন ধরেই দেখছে, তোমার স্টাইল জানে এখন এই গোঁফ দেখলেই যদি ফিক্ করে হেসে ফেলে? মুশকিল আর কাকে বলে! মুখে হাত রেখে ঢেকে চলতে হবে দেখছি

 

দুপুর বেলা মামার সঙ্গে দেখা হলো আলোক মামা এই মামা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন তাই তার সঙ্গে মেলামেশা নিষেধ কণা খালা আভাস-ইঙ্গিতে যেটা বুঝিয়েছেন সেটা হলো, মেলামেশা তো নিষেধই, হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে কথা বলাও নিষেধ আমি তো কথাও বলতে যাচ্ছিলাম না, মিশতেও যাচ্ছিলাম না বাড়ি ফিরবো বলে লক্ষ্মী মিষ্টির সামনে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক তখনই আরেক রিকশা থেকে নেমে মামা সামনে দাঁড়ালেন মহা মুছিবৎ! পালানোর কোন উপায় নাই আর কথা না বলে তো আরও উপায় নাই

আমার ভড়কে যাওয়া দেখে মামাই প্রথম কথা বললেন, কেমন আছেন? মুখ-টুখ শুকিয়ে একেবারে আমচূর হয়ে গেল যে!

বয়সের দিক থেকে আমিই বড় তাই মামা আপনি করে বলেন মামাকে যেহেতু সম্মান দিতে হয় মায়ের ভাই বলেÑ কাজেই আমিও তাকে আপনি বলে সম্বোধন করি- না মানে, এই ভাল আছি রোদে ঘুরছি তো তাই হাঁপিয়ে উঠেছি কখন এসেছেন?

- এসেছি এক সময় আমার খোঁজ তো আর রাখবেন না! এখন তো পর হয়ে গেছি!

- কী যে বলেন মামা! আছেন কেমন? মামী কেমন আছে? Ñ হা হা করে হেসে উঠলেন মামা

- চলেন বসি এক জায়গায়

- আমার একটু কাজ ছিল মানে তাড়াতাড়ি যেতে হবে

- কাজ ছিল, নাকি? ইয়ার্কি! দুপুর বেলা কাজ থাকে? পালানোর বুদ্ধি!

রেগে গেছেন মামা কোন উপায় নেই বেশী কথা না বলে যেতেই হলো মামার সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা ক্যান্টিনে বসা হলো তারপর শুরু হলো মামার আক্রমণ এক সময় মামা ছাড়া কিছুই চলতো না এখন একটা খোঁজও রাখি না মামার একটা মেয়ে হয়েছে, তাও দেখতে গেলাম না, খোঁজ নিলাম নাÑ এইসব নানান প্যাচাল শুরু করে দিলেন মামা

- শোনেন, আপন কিন্তু আমিই বেশী ছিলাম ছোট আপারা বেশী ছিল না এখন যা করে বেড়াচ্ছেন, মোটেই ভাল না

আমি নিরব কারণ মুখ খুললে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে আগে থেকেই এই রকম তর্ক হতে হতে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় শেষে সম্পর্কই নষ্ট হবার দশা হয়ে যায় অবশ্য একদিন পরই সব ঠিক হয়ে যায় এখনকার পরিস্থিতিটা আরও খারাপ মামার সঙ্গে পুরো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একদিন পর দেখা হবার সম্ভাবনা নেই তাছাড়া আগের চেয়ে মেজাজটা আমার এমনিতেই চড়া হয়ে গেছে তার ওপর আবার গোঁফটা নিয়ে মেজাজ গরম রয়েছে সুতরাং যতো খুশি বলে যাক মামা শুনে যাওয়াটাই ঝামেলা কমানোর উত্তম উপায়

মামা নিজের সব দোষগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে অন্যের ওপর মুখ চালাতে ওস্তাদ এজন্য আমি মনে মনে তাকে চাপাবাজও বলে থাকি অথচ আমার এই জিনিসটা নাই বলে তর্কে জিততে পারি না তর্ক শুরু হলে মাথা গুলিয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায় এক তরফা মুখ চালাতে চালাতে মামা ক্লান্ত হয়ে যা দিয়ে সমাপ্তি টানলেন তা হলো,

- ঢাকার মিরপুরে সেই বাড়িতেই আছি কাল পাবনা এসেছি আপনার মামীও এসেছে এক বন্ধুর বাড়িতে আছে আমাদের সঙ্গে দেখা করেন না করেন, মেয়েটাকে দেখে যান কখন যাবেন বলুন? ইচ্ছে করলে এখন যেতে পারেন

কী এক সমস্যা! সমস্ত আত্মীয়-স্বজন থাকতে মামাকে উঠতে হয় বন্ধুর বাড়ি! তাও গোপানে! সবাই মামাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে আপন মানুষেরা পর হয়েছে

আমি বললাম, এখন তো যেতে পারবো না সন্ধ্যার পর হলে সম্ভব সন্ধ্যার পর বলার কারণ হলো, তাহলে গোপনে দেখা করতে পারবো এই যোগাযোগের ব্যাপারটা অন্ধকারেই কেবল চাপা দেওয়া যেতে পারে তাছাড়া এই ছোট মামার ব্যাপারে কণা খালার অসংখ্য চোখ ঘুরে বেড়ায় মামার সঙ্গে কে কখন কথা বললো, কোথায় গেল, কি কথা বললোÑ সব জেনে যান খালা কেমন করে যে জানেন কিছুই বুঝি না হয় খালার অনেক গোয়েন্দা আছে, অর্থাৎ সিআইএ মতো মিশন আছে, আর না হলেÑ মামার সঙ্গে যারা মেলামেশা করে, তাদেরই কেও উৎসাহী হয়ে খালাকে জানিয়ে দেয় উদ্দেশ্য তাঁকে রাগানো, মামার সঙ্গে সম্পর্কটাকে আরও দুরে ঠেলে দেওয়া আমার তো মনে হয় শেষেরটাই ঠিক সুতরাং রাতে দেখা করতে গেলেও চেপে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ এখন বসে গল্প করছিÑ সেই খবরই পৌঁছে গেছে কিনা, কে জানে! খালা যে কী! বিয়ে করে ফেলেছে, অনেকগুলো মাস কেটে গেছেÑ এখনও মেনে নেবেন না ভাল কথা মেনে নেওয়া না হলোÑ আমরা কেও কথা-বার্তা বললেই বা ক্ষতি কি? কাওকে পর করতে চাইলেই তো আর পর হয় না রক্তের তো একটা সম্পর্ক আছে তাছাড়া সবাই তো মানুষ মামা যে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে, হোক তা খালাদের অপছন্দ, কিন্তু সেও তো মানুষ একই আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ মানুষের জন্য বলেই তোÑ মানুষ

মামার কাছ থেকে বিদায় নিতে নিতে ঘণ্টা দুয়েক চলে গেল এরমধ্যে মামা সামনের ঈদটা তার বাড়িতে গিয়ে করার জন্য জিদ ধরলেন আপাদের বাড়ি যেতে হবেÑ তা মানতেই রাজী নয় বিরোধের মধ্যদিয়ে ঠিক হলো, রাত সাড়ে টায় মামা আমাকে ডেকে নিয়ে যাবেন আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টার বেশী আটকিয়ে রাখা চলবে না সময়ের কোন হেরফের হলে পরিণতি খারাপ হবে কথা ঠিক হবার পর জিদ ধরলাম, সাড়ে টার একমিনিট দেরি হলে ডাকতে আসলে আমি নির্ধারিত জায়গায় থাকবো না অর্থাৎ মামার মেয়েকে দেখতে যাওয়া হবে না

খালার বাড়িতে আসার সময় ভয় হচ্ছিল মামার সঙ্গে দেখা হওয়ার ব্যাপারটা না জেনে যান তিনি জানবেন তো অবশ্যই, যে রকম গোয়েন্দা লাগানো আছে! এখন যদি না জানেন রাতে বলেই ফেলবো খালাকে যে, মামার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কথা বলেছি তবে বাড়িতে যাবার ব্যাপারটা চেপে যেতেই হবে

না, দুপুরে খাবার সময় বুঝলাম খালার কানে ব্যাপারটা পৌঁছেনি -কে রাতেই জানাবো দেখা হবার বিষয়টা

 

রাত সাড়ে টা বাজার ১৫ মিনিট আগে এসে হাজির হলেন মামা প্রেসক্লাবে বসেছিলাম আমি মামার সঙ্গে আরেকটি ছেলে কি যেন নাম বললো, পরিচয় করিয়ে দিলো তারপর রওনা হলাম খুব ভয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি কেও দেখে ফেরলো কিনা! এডওয়ার্ড কলেজের কাছে এসে রিকশা থেকে নেমে গেল মামা বললো, এখানে নাকি বন্ধুদের সঙ্গে একটু কথা বলবে আমি ক্যান্টিনে বসে মামা কথা বলছে তার বন্ধুদের সঙ্গে এরা সব ক্ষমতাসিন দলের সশস্ত্র মাস্তান চাঁদাবাজী, মারপিট, হুমকী দেওয়া, গুলি চালানো, মানুষকে হতাহত করাই এদের কাজ এক-একজনের চালচলন ওয়েস্ট্রার্ন ছবির ভিলেনের মতো এরা মামার খুব ভক্ত আমার চেয়ে অনেক জুনিয়র অবশ্য আমাকে এরা কেও চেনে না চিনলে অথবা আরও অনেক কিছু জানলে ওয়েস্ট্রার্নি ভাব নিয়ে আমার সামনে চলার সাহস কারও ছিল না কী আছে তাতে! ওদেরই এখন সময়! আমাদেরও সময় ছিল, কিন্তু তখন এরকম ওয়েস্ট্রার্ন ওয়েস্ট্রার্ন ভাব ছিল না আমাদের মধ্যে মারপিট, চাঁদাবাজী, টাকা-পয়সার ভাগাভাগি, ফাটাফাটি ছিল না আজ এরা যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে হইচই করছে, ঠিক সেই জায়গাটায়, পাশে আমতলায়, কুঁয়োতলায় যারা বসতামÑ তাঁদের হাতে থাকতো মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন আর মাও সেতুং-এর বই পৃথিবীকে সুন্দর করার জন্য আলোচনাই ছিল মুখ্য এখান থেকে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, ৬৮-৬৯-৭০-এর আন্দোলন হয়েছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ডাক এসেছে স্বাধীনতার পরেও কতো আন্দোলনের মশাল জ্বলেছে এখান থেকে তখন ছেলেদের মাঝে এখনকার মতো মাস্তানি ছিল না

মামার গল্প শেষ হচ্ছে না মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে এক ঘণ্টা হয়ে গেল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, যাবো না মামার ওখানে বিদায় নিয়ে নেবো এখন বিরক্তের সীমা যখন ছাড়িয়ে গেল, তখন এলেন মামা বললেন, মামু একটু বসতে হবে আমি হুন্ডায় চড়ে এক জায়গায় যাবো আর আসবো

আমি বললাম, ১০ মিনিটের মধ্যে না এলে চলে যাবো-  মামা শোনারও অপেক্ষা করলেন না একজনের হুন্ডায় উঠে চলে গেলেন ১০ মিনিটের জায়গায় আধঘণ্টা চলে যেতেই আমি ফিরে চললাম রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে দিনটাই আজ কুফা! হন্ হন্ করে অনেকক্ষণ হাঁটলাম সাড়ে ১০টার মধ্যে বাড়িতে ঢুকতে হবে নইলে সবাই শুয়ে পড়তে পারে তখন ডেকে তোলা, খাওয়া ইত্যাদি এক ঝামেলা এখন ১০টা পেরিয়ে গেছে আরও খানিক হেঁটে খালার বাড়ি পৌঁছালাম

খালা নাই শুচিকে সঙ্গে নিয়ে আরেক খালার বাড়ি গেছেন ভালই হলো আমি খেয়ে-টেয়ে শোবার জন্য মনোযোগ দিলাম বিছানা একটু ঝেড়ে নিলাম সালেহাকে মশারি টাঙিয়ে দিতে বললাম তারপর দরজা-জানালা বন্ধ করে মশারির ভেতর ঢুকবো, এই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো কালই মেরামত করেছি ওটা ভাবলাম খালা এসেছেন কিন্তু সালেহা এসে খবর দিলো, এক ছেলে ডাকে ধক্ করে উঠলো ভেতরটায় মামা নাতো? না, মামা হবে কেন? মামাকে সালেহা চেনেই তাহলে কি অন্য কাওকে পাঠিয়েছে মামা?

সত্যিই তাই মামাই পাঠিয়েছে একজনকে ভাগ্যিস সালেহা এসে দাঁড়ায়নি পেছনে তাহলে জেনে ফেলতো ব্যাপারটা ছেলেটি বললো, মামা মোড়ে দাঁড়িয়ে, ডাকে

মহা মুসিবৎ! লুঙ্গি-টুঙ্গি পরে স্যান্ডেল পায়েই যেতে হবে দেখছি আবার মোড়ে দাঁড়িয়েছে! আরেক বিপদ! ওই পথ দিয়ে খালা ফিরবেন মামাকে দেখলে ঠিক বুঝবেন, আমার কাছেই এসেছে

সাহেলাকে দরজা বন্ধ করতে বলে হন হন করে ছুটলাম মোড়ের দিকে মামাকে পেয়ে হিরহির করে টেনে আরও খানিক দূরে নিয়ে গেলাম বললাম, শিগগির আসেন, খালা বেড়াতে গেছেন, এক্ষুণি এলো বলে-  খানিক দূরে এসে রেগে গেলাম, এতো রাতে কেন?

- চলুন

- কোথায়?

- বা রে, যাবার কথা ছিল কোথায়?

- সে তো সাড়ে টায় এখন বাজে সাড়ে ১০ টা সম্ভব নয়

- ওসব কোন কথা শুনছি না চলুন এক্ষুণি

- অসম্ভব খালা এসে যাবেন এক্ষুণি এসে শুয়ে পড়বেন ডাকাডাকি করে জাগাতে পারবো না অতো রাতে

- আরে, যেতে-আসতে ১০ মিনিট লাগবে চলুন

রাগে শরীরটা জ্বলছে তারপর আবার জামা-কাপড় ধরে টানাটানি করছে বেকায়দা অবস্থা রাস্তার মধ্যে কী এক ফাসাদ! তারপর আবার খালা কোন্ দিক দিয়ে এসে পড়বেন, ঠিক নেই

অগত্যা বললাম, চলুন কোন রকম দেরী করাবেন না যতোসব!

বেশীদূর যেতে হলো না আধা মাইলের মতো আসার পর একটি বাড়ি ঢুকলাম ভেতরে মামার মেয়েটো অদ্ভুৎ সুন্দর /১০ মাস বয়স হবে বোধহয় এতো সুন্দর মেয়ে সত্যিই আমি দেখিনি দারুণ করে আদর করার মতো না চাইতেই কোলে চলে এলো কী সুন্দর! হাত নেড়ে নেড়ে মনে হয় কথা বলছে খালার ওপর খুব রাগ হলো এই রকম একটা রতœকে অস্পৃশ্য করে রেখেছেন! মানুষের জীবনে ঝড় তো আসবেই অঘটন যা ঘটে তা মানুষেরই ঘটে জীবনটাই তো তাই- এটাকে মেনে নিতে না পারলে মানুষ কেন? কেও কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে, সে অঘটন ঘটায়নি? কোনদিনও বলতে পারবে না কারণ অঘটনটাই স্বাভাবিক

ফুটফুটে অদ্ভুৎ সুন্দর মেয়েটাকে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না বোধহয় পুরো এক ঘণ্টা কেটে গেল এরমধ্যে মামী খাবার ব্যবস্থা করলেন খেতে হলো বিদায় নিতে নিতে অনেক রাত মামার অবস্থার জন্য খারাপ লাগলো কিন্তু করার কিছুই নেই সবার এখানে প্রেস্টিজ! বংশের গৌরবÑ কতো কী বাধা হয়ে আছে!

 

---------- চলবে ----------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for Message