স্বপ্ন রাতের তারা
আবুল হোসেন খোকন
ছাব্বিশ.
গভীর অরণ্য। জঙ্গল আর গাছ-পালায় ভর্তি। বড় বড় গাছের মধ্যে শাল, পিয়াশাল, অর্জুন, গামহার, ক্ষয়ের, শিশু, হরজাই মাথা উঁচু করে আছে। ইয়েলো ফিভার, অ্যাকাশিয়া আর ছোট ছোট গাছ-পালার ভেতর দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের জিপ, ল্যান্ডরোভার।
হুড খোলা। সামনের উইন্ডস্ক্রিন বনেটের ওপর শোয়ানো। মেটে সবুজ রংয়ের জিপ ছুটছে লতা-পাতার সঙ্গে ঘষা খেয়ে, বারি খেয়ে। আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। জিপে আমি, বিনু, বুনু, দুলাভাই এবং আপা। প্রত্যেকের পরনে সামরিক পোশাক। ক্যামোফ্লেজিং করা। পিঠে ব্যাকস্যাক। আমি বসেছি সামনের বাঁ পাশে। হাতে উজি সাব মেশিনগান। ডানে দুলাভাই। চালক। পিঠে চকচকে চাইনিজ টমিগান। পিছনের আসনে আপা, বিনু, আর বুনু। প্রত্যেকের হাতে এক-৪৭ রাইফেল ও ব্রেনগান। গঁ গঁ করে ছুটছে ডাবল ইঞ্জিনের জিপ। প্রত্যেকের চোখে সতর্ক দৃষ্টি।
জিপ আর গাছ-পালা মাড়ানোর শব্দে জেব্রাদের দল ভেঙে যাচ্ছে, থমকে দাঁড়াচ্ছে দলবদ্ধ থমসন গ্যাজেল, গ্রাটস গ্যাজেল। এদিক-ওদিক ছুটছে শেয়াল, টোপী, এলানন্ড, কাঠবেড়ালি, গন্ডার। এ রাজত্বে প্রবেশ করায় বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাচ্ছে হাতি, জিরাফ, সিংহ, বাঘ, চিতাসহ অনেক রকম গেঁছো জীব-জন্তু। গাছ থেকে উড়ে যাচ্ছে তিতির, বুনো মুরগি, ময়ুর, ছাতার, ব্রেইন ফিভার, টিটি, খাপু, অক্সপোকার জাতীয় পাখি। একটা এবরো থেবরো জায়গায় এসে ঘর ঘর শব্দ করে জিপের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। স্ট্রাটার ঘুড়িয়ে কোন কাজ হলো না। আমরা বুড়ো আঙুল থম্বসআপ করলাম। বুনু পিছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উপরে সেট করা হ্যাভী মেশিনগানের বাটনে হাত রাখলো। আর্মস কক্ করে আমিও নেমে পড়লাম। ক্যামোফ্লেজ জুতো ডুবে গেল আধহাত ঘাঁসের নিচে।
চারদিকে জঙ্গল। দূরে দেখা যায় না। বিনুও নেমে পড়েছে। ও হঠাৎ লাফিয়ে উঠেই ব্রেনগানের ট্রিগারে আঙুল রাখলো সতর্কভাবে। গাঢ় ঘাঁসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে একটা গাম্বুনভাইপার। আমি ইশারা করলাম গুলি না চালাতে। সাপটা চলে গেল। আমাদের গাড়িটা আটকে গেছে। ঠেলে-ঠুলে দেখতে হবে। দুলাভাই বায়োনোকুলারটা চোখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আপা ভয় পাচ্ছেন। আমি বিনুদের ইঙ্গিতে বললাম, কোন জীব-জন্তু দেখে যেন গুলি না করে। কারণ তাহলে জীব-জন্তুরা ক্ষেপে গেলে মহাবিপদ হবে। তারচেয়েও বড় কথা জন্তুর চাইতেও বেশি বিপদ হবে মানুষ। শত্রুপক্ষ রয়েছে। তারা সজাগ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া টের পেলে জঙ্গলে থাকা পচার আর জংলিরাও বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। ওদের বিষাক্ত তীরের আঘাতে নিঃশব্দে বেরিয়ে যেতে পারে প্রাণবায়ু। আচমকা পোচারদের বুলেটেও ঝাঁঝরা হয়ে যাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কমান্ডো নাইফ ব্যবহার করতে বললাম বিনুদের। হঠাৎ বিমানের মৃদু গর্জনে সচকিত হয়ে উঠলাম। গাছের ফাঁক-ফোকর দিয়ে একটা সেসনা চোখে পড়লো। নিশ্চয়ই ওয়াচার। তাড়াতাড়ি গলায় ঝুলানো বায়োনোকুলারটা হাতড়ালাম। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না। হাত-পা যেন ভারী পাথর হয়ে গেছে। দ্রæত সড়ে যেতে না পারলে বিপদ। চোখেও কেমন যেন ঝাপসা দেখতে লাগলাম। ময়লা ঢুকে পড়েছে বোধহয়। সামনের সবকিছু অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সেসনার শব্দ আরও জোরালো হয়ে কানে বাজলো। আবার বায়োনোকুলার হাতড়ালাম। একইসঙ্গে বিমানটাকে দেখার চেষ্টা করছি। একেবারে কাছে এসে পড়েছে মনে হয়। শত্রুপক্ষের বিমান না হয়েই যায় না। কিন্তু দেখতে পারছি না। শিশু, অর্জুন আর শালগাছের উপরের দিকে শব্দ হচ্ছে। ঠিক তখনই বায়োনোকুলারটা পেলাম।
বিনুরা কি করছে দেখার জন্য ঘুরে তাকাতে চেষ্টা করলাম। জিপ ফাঁকা। কেও নেই। গেল কোথায় ওরা? আশঙ্কায় খোঁজাখুজি করতেই দেখলাম দূরে বুনু একা দঁড়িয়ে। চিৎকার করে জানতে চাইলাম, বিনুরা কোথায়? কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হলো না। ওকে শুয়ে পড়তে ইশারা করলাম। কিন্তু দৌঁড়ে ও জঙ্গলে ঢুকে পড়লো। হঠাৎ বিমানের গর্জন মিলিয়ে যেতে শুনলাম। বায়োনোকুলারে চোখ রাখলাম, ঝাপসা। তবে বিমান নেই। চলে গেছে। নিশ্চয়ই আমাদের দেখেছে এবং শত্রুদের খবর জানানোর জন্য চলে গেছে। হয়তো এরইমধ্যে অয়ারলেসে পৌঁছে গেছে এ খবর।
আবার খুঁজলাম বিনুদের। শরীরটা যেন বশ মানছে না। বড্ড দুর্বল এবং ভারী। হ্যাঁ, চোখে পড়েছে। সামনে টমিগান হাতে আমার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে বিনু। ভাবলাম সবাই হয়তো কাছেই কোথাও লুকিয়েছে। পা দু’টো বেশ ভারী। টেনে টেনে এগুতে হলো। সামনের দিকটা ফাঁকা। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। বায়োনোকুলার তুলে তাকাতেই দেখতে পেলাম বুক হিম করা দৃশ্য। শত্রুপক্ষের সারি সারি সৈন্য এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। সবার হাতে ভারী অস্ত্র। দৌঁড়ে আসছে। আমার হাত-পা আরও অবশ হয়ে গেল। ডান আর বামে তাকিয়ে দেখলাম, সেদিক থেকেও সৈন্যরা আসছে। তারমানে তিনদিক থেকে ঘেরাও হয়ে গেছি। ভয়ঙ্কর বিপদ। ওদের হাতে যেসব অস্ত্র রয়েছে তার তুলনায় আমাদের কিছুই নেই। জিপও নষ্ট। তার ওপর আমরা সংখ্যায় এই মুহূর্তে কম এবং দুর্বল। দৌঁড়াতেও পারবো না। কিন্তু তাই বলে তো রক্ষা নেই। লড়তে হবেই। যুদ্ধ করতে হবে এবং মারা যেতে হবে।
চিৎকার করে বিনুদের তৈরি হতে বললাম। হঠাৎ বিনু, বুনু, দুলাভাই, আপা সবাইকে দেখতে পেলাম। তারা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থম্বসআপ করলেন। তারমানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এবার আমি আমার অস্ত্রটাকে কক্ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু হচ্ছে না। আটকে গেছে। একেই বলে বিপদের উপর বিপদ। হাতের চেটো দিয়ে জোরে আঘাত করলাম বুলেট ম্যাগজিন আর চেম্বারের মাঝখানে। আবার চেষ্টা করলাম কক্ করতে। খুব শক্ত হয়ে আছে। জোর করে বাটন টেনে আনলাম। তারপর ছেড়ে দিলাম। হ্যাঁ, মনে হচ্ছে এখন তৈরি।
সামনে, ডানে, বামে তাকিয়ে দেখলাম এসে গেছে সৈন্যরা। ভাল করে দেখলাম, শুধু সৈন্য নয় ওরা। অনেকের পোশাক সিভিল। মাথায় কাপড় বাঁধা। মুখগুলো কেমন যেন লম্বা। ঠিক মানুষের মতো মনে হচ্ছে না। হ্যাঁ, এবার আরও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওদের চেহারা অনেটা মানুষের মতো হলেও ঠিক মানুষ নয়। শিল্পী কামরুল হাসানের আঁকা ইয়াহিয়া খানদের মতো। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওদের কারও কারও হাতে চাঁদ-তারা মার্কা পতাকাও দেখা যাচ্ছে। কি যেন স্লোগান দিচ্ছে ওরা। আমাদের দিকে হাত উঁচিয়ে দেখাচ্ছে।
উজি মেশিনগানটার ব্যারেল তাক করলাম ওদের দিকে। সৈন্যরা হটাৎ দেখে ফেললো আমাকে। আমাদের দিকে তাক হলো অনেকগুলো মেশিনগান। আমি চিৎকার করে লাফিয়ে বিনুদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘ফায়ার’। সঙ্গে সঙ্গে আমার আঙুল ট্রিগারে চেপে বসেছে। এরমধ্যে মধ্যে কি হয়ে গেল মেলাতে পারলাম না। বিস্ফোরণের মতো সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। অনুভবশক্তি ভোঁতা। নড়াচড়ার চেষ্টা করলাম। না, নড়তে পারছি। হাত-পা জোড়া আগের মতো ভারী মনে হচ্ছে না। খানিকটা যেন বেশী রকম হালকা-পাতলা মনে হচ্ছে। একটু দম নিয়ে শরীরে বল ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলাম। ফিরে আসছে শক্তি।
ওরা আসছে। আসতে আসতে অনেক এসে গেছে মনে হলো। বোধ হলো সংখ্যা অফুরন্ত। প্রথম ধাক্কটা সামলে নিয়ে ওলোট-পালোট অবস্থা দূর করতে চাইলাম। ব্যাপার কি? আমি কি জ্ঞান হারিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পড়ে ছিলাম? কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথাটাতো এখন বেশ পরিস্কার মনে হচ্ছে। সবকিছু ভাল করে লক্ষ্য করতে চেষ্টা করলাম। উঠে দাঁড়ালাম।
পিছনে, সামনে, ডানে, বামে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম অনেকে দাঁড়িয়ে হাসছে। বিনু, বুনু, আপা, দুলাভাই-ই শুধু নয়, অনেকে আছে। আছে শুচি, সুষম। আরও আছে বন্ধু-বান্ধব অনেকে। আছে সে-ই ছোট্ট বেলার ঘুড়ি ওড়ানোর বন্ধুরা, পুতুল খেলা বান্ধবীরা, মাছ ধরার সঙ্গীরা, গণসঙ্গীতের দল। অনেক আগের সেই মাঠ-ঘাট পেরিয়ে বীরের মতো এগিয়ে যাবার বিপ্লবী সাথীরাও আছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম আরও অনেক লোক আছে। একজন দুইজন নয়, দলে দলে, শ-তে শ-তে, হাজারে হাজারে লোক। কেও কারখানার কাজ বন্ধ করে চলে এসেছে, কেও ক্ষেতের লাঙল ছেড়ে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এসেছে। আরও সব অনেকে এসেছে।
অবাক ব্যাপার, সবার হাতে রাইফেল। চোখ-মুখ চকচক করছে সকলের। মনে হচ্ছে যেন বিপূল বিক্রমে কোন উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখছি নাকি? আনন্দে সবাইকে আহŸান জানালাম। কিন্তু অন্যদিকে দেখলাম আরেক দৃশ্য। হায়েনার মতো চেহারার মানুষগুলো পড়িমরি করে পালানোর চেষ্টা করছে। সৈন্যরা সব অস্ত্র ফেলে দিয়ে হাত তুলে আছে। হায়েনাদের সঙ্গে পালাতে গিয়ে চর্বি থলথলে নাদুস-নুদুস লোকগুলো কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। আবার উঠছে আবার পড়ছে। কারা ওরা? ওদের আতঙ্কিত চোখগুলো ছিটকে বেরিয়ে পড়ার মতো হয়েছে। ও হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। ওরা হলো সেইসব লোক- যারা বিত্তশালী, শিল্পপতি, লুণ্ঠক ব্যবসায়ীদের শিরোমণি সব। এদিকে জীর্ণকায় শীর্ণ মানুষের দল ধাওয়া করছে ওদের। ধাওয়া করছে শত শত, অগণিত মানুষের দল। রাইফেল হাতে অনেকে বিজয়ের স্লোগান দিচ্ছে।
আমিও আর স্থির থাকতে পারলাম না। হাতের মেশিনগানটা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে চিৎকার করে উঠলাম আনন্দে। স্লোগান দিতে চাইলাম। হঠাৎ মনে হলো সময়টা কতো দেখা দরকার। তাড়াতাড়ি বাম কব্জি উঁচিয়ে তুললাম। ঘড়ি নেই। ওটা বিনুদের কাছে। জোরে একটা লাফ দিলাম বিনু-বুনুদের দিকে। আর তখনই ঝট করে ঘুম ভেঙে গেল।
শরীরটা ঠান্ডা। কোন রকম জ্বর নেই। একেবারে ঝরঝরে লাগছে। উঠে বসতে ইচ্ছে হলো। আশ্চর্য, কোন জড়তা নেই। সুন্দরভাবে উঠে বসলাম। সময় দেখার কথাটা আবার মনে হলো। ভোর ৬ টায় বাস। তার অন্তত ঘণ্টা দেড়েক আগে জেড়ে ওঠার কথা। অবশ্য অসুবিধা হবার কথা নয়। ঘুমুবার আগে মনকে অটোসাজেশন দিয়ে রেখেছি। সাড়ে ৪ টার আগেই জেগে উঠার জন্য ঠিক করা আছে।
ঘরটা অন্ধকার। হাতড়ে বালিশের তলা থেকে ছোট্ট টর্চটা বের করলাম। তারপর ঘড়িটা নিয়ে আলো ফেললাম ডায়ালে। সাড়ে ৩টা বেজে ৪৫ মিনিট। এখনও দেরী আছে ৪৫ মিনিট। আরেকটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।
.........সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। বিশাল সমুদ্র। সামনে কোন কিছু নেই। শুধু পানি আর পানি। পৃথিবীর তিনভাগ পানি আর একভাগ ভূমি। সুতরাং আমরা যে ভূমিতে বাস করি, তার তিনগুণ বড় হচ্ছে এই পানি। মানে সমুদ্র। এই সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছি। যতোদূর দেখা যায় শুধু নীল পানি। বিরাট বিরাট ঢেউ হয়ে উঠছে। আছড়ে পড়ছে। হু হু করে একটা গর্জন হচ্ছে। গর্জন বাড়ছে। বুক কেঁপে উঠছে থরথর করে। সমুদ্রের ঢেউ উপরে উঠছে উত্থানের মতো। আছড়ে পড়ছে বিকট শব্দে। সাঁ সাঁ বেগে প্রচন্ড বাতাস। ঢেউ আরও উন্মত্ত হয়ে উঠছে। যেন লক্ষ কোটি মানুষের স্লোগানমূখর হাত উঠছে, নামছে, উঠছে। মানুষের গর্জন আর সমুদ্রের গর্জন একাকার হয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে যেন সাইরেনের মতো একটা সুর ভেসে আসছে। ড্রামের বিট পড়ছে দামামার মতো। সমুদ্রের গর্জনে সব মিলিত হচ্ছে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। আমিও গর্জন হয়ে যাচ্ছি। প্রমত্ত বিস্ফোরণের মতো সমস্ত দিককে কাঁপিয়ে তুলছি।
আস্তে করে ঘুম ভাঙলো। টর্চ জ্বেলে ঘড়ি দেখলাম। কাটায় কাটায় সাড়ে ৪টা বাজে।
------- শেষ --------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message