বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

উন্মোচন, পথনাটক আশির দশক : পর্ব-৩

 

 

উন্মোচন

আবুল হোসেন খোকন

[প্রারম্ভিক কথা : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকের শুরুতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন আরেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অবৈধ এবং অসাংবিধানিক এইসব ঘটনার মৌলিক প্রেক্ষাপটকে অবলম্বন করেই ১৯৮৩ সালেউন্মোচনপথনাটকটি রচনা করা হয় এরশাদের সামরিক শাসন চলাকালে দুঃসাহসিক ঝুঁকি নিয়ে এই পথনাটকটি গেরিলা কায়দার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পাবনার শহরাঞ্চলে অর্ধশতাধিক জায়গায় প্রদর্শন করা হয়েছিল পরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কয়েকটি প্রকাশ্য মঞ্চেও এটি প্রদর্শন করা হয়

উন্মোচনমূলত সামিরক শাসনবিরোধী পথনাটক নাটকটির সংলাপ আদল হুবহু

 অক্ষুণ্ন রেখেই এখানে তুলে ধরা হলো]

 

তৃতীয় দৃশ্য

 

দৃশ্য চরিত্র : ড্রাইভার

 

[মঞ্চের নেপথ্যে অথবা দর্শকের মাঝ থেকে সমবেত স্লোগান উঠবে]

 

স্লোগান : দুনিয়ার যাত্রী---------------- এক হও এক হও, যানের চাকা যানের চাকা ---- সাড়তে হবে সাড়তে হবে, ছেঁড়া তার ছেঁড়া তার -------- জুড়ে দাও জুড়ে দাও, নাটবল্টু নাটবল্টু –---- লাগাতে হবে লাগাতে হবে, যানের ইঞ্জিন যানের ইঞ্জিন---- সাড়তে হবে সাড়তে হবে

[এবারে মঞ্চকে জনসভার স্টেজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে মঞ্চে মাইক্রোফোনসহ মাইকের স্ট্যান্ড থাকবে বক্তব্য রাখার জন্য ড্রাইভারের প্রবেশ]

ড্রাইভার : প্রিয় যাত্রী ভাই বোনেরা, আস্সালামুআলাইকুম আপনাদের উন্নয়নের স্বার্থে, আমাকে আপনারাই ড্রাইভার নির্বাচিত করেছেন আমি ড্রাইভার হবার পরে- আপনাদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বিগত ড্রাইভাররা যা পারেনি, মহান করুণাময় আল্লাহর রহমতে, আমি আপনাদের জন্য তা করেছি আজকে, যাত্রীদের কোন সমস্যা নেই তারা সুখে-শান্তিতে অবস্থান করছেন আমি ড্রাইভারের ক্ষমতায় আসার পর, আসনের রং পাল্টে দিয়েছি এক চুয়াল্লিশটি ছিদ্র ওয়ালা চাকার- একশটি ছিদ্র বন্ধ করেছি ভালো নাটবল্টু লাগাবার জন্য, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনেছি ছেঁড়া তারের কভার, বদলে দিয়েছি মটরযানের রং চটে গিয়েছিল, আমি তা নতুন করে ডিস্টেম্পার করেছি আমি যাত্রী এবং মটরযানের, এমন উন্নয়ন ঘটিয়েছি, যা দেখে বিদেশি মটরযানওয়ালারা ভূঁয়শী প্রশংসা করেছে তারা আমাকে, তাদের মটরযান সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে

 প্রিয় যাত্রীরা আমার শুধু তাই নয়, আমি আপনাদের এবং যানের উন্নয়নকল্পে, তাদের  কাছে সাহায্য  চেয়েছি তারা আমাদের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে, মিলিয়ন মিলিয়ন কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছেবিশ্বের দরবারে আজ আমরা, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সাহস অর্জন করেছি 

প্রিয় যাত্রীরা- আমাদের এই উন্নয়নে, একশ্রেণীর যাত্রী- শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রায়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মেতে উঠেছে তারা বিশ্বের দরবারে, আমাদের হেয় করতে চায় তারা এই ড্রাইভারের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না ওদের থেকে সতর্ক থাকুন ওরা আপনাদের শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না ওদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিতে হবে 

মটরযানের ভাইয়েরা আমার জানি, এই যানের উন্নয়ন আপনারা চান তাই আপনারা অনেক ধৈর্য্যধারণ করে আছেন আরও ধৈর্য্য ধরতে হবে আপনাদের, যানের উন্নয়নের জন্য আরও বেশী পরিশ্রম করতে হবে 

প্রিয় যাত্রীরা, আপনাদের উন্নয়নে ড্রাইভারের পক্ষ থেকে, আরও কিছু করার জন্য, কতোগুলি যুগান্তকারী নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এসমস্ত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে চাকার লিক মেরামতের জন্য আরও কিছু ছিদ্র বন্ধ করা, রং করে নাটবল্টু লাগানো, তারের কভার বিদেশি কভারে মুড়ে দেওয়া, সিটে নতুন করে বার্নিশ লাগানো আশা করি এতে আপনাদের ঐতিহাসিক উন্নতি ঘটবে আপনাদের ওপর গভীর আস্থা রেখে বিদায় নিচ্ছি খোদা হাফেজ মটরযান- জিন্দাবাদ

[ড্রাইভারের প্রস্থান এরপরেই নেপথ্যে অথবা দর্শকদের মধ্য থেকে স্লোগান উঠবেস্লোগান  শেষ হতেই চতুর্থ দৃশ্য শুরু হবে]

 

স্লোগান : দুনিয়ার যাত্রী--- এক হও এক হও, মটরযানকে মটরযানকে ------ সাড়তে হবে সাড়তে হবে, ইঞ্জিনকে ইঞ্জিনকে ----- বদলাতে হবে বদলাতে হবে, মটরযানকে মটরযানকে ----- চালাতে হবে চালাতে হবে, ড্রাইভারের গদিতে ----- আগুন জ্বালো একসাথে, ড্রাইভার যদি বাঁচতে চাও ----- মটর ছেড়ে চলে যাও

 

----------- চলবে ----------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for Message