রিপোর্টারের
টুকরো
স্মৃতি
- আবুল হোসেন খোকন
সাংবাদিকতা করতে আমার ঢাকায় আগমন ২০০৫ সালে। এ সময় এদিক-ওদিক লেখালেখি করছিলাম। অর্থাৎ কলাম লিখছিলাম। আজকের কাগজ, দৈনিক সংবাদ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, সমকাল ছাড়াও বেশ কয়েকটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে লিখছিলাম। এরমধ্যে নিয়মিত পয়সা পাচ্ছিলাম আজকের কাগজ থেকে। এছাড়া সাপ্তাহিকগুলোও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী দিচ্ছিল। এইসব করার ভেতর দিয়ে কোন সংবাদপত্রে নিয়মিত চাকরি খোঁজার কাজটিও চলছিল। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত কাজ করছিলাম একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বেশকিছু প্রকাশনা এবং তাদের মুখপত্র 'জাগরণ’ সম্পাদনায়। বেসরকারি সংস্থা 'নিজেরা করি’ তেও রিপোর্ট বিভাগে কাজ করেছি। এক পর্যায়ে চাকরির ব্যাবস্থা হয়ে গেল দৈনিক আমাদের সময়-এ। এর সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। আমাকে উপ-বার্তা সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটা ২০০৫ সালের শেষ দিকের ঘটনা।
ভালই লাগছিল। মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট পরিমান বেতন পাচ্ছিলাম। নাঈম ভাই নিজেও আমাকে খুব ভাল চোখে দেখছিলেন। আর বার্তা সম্পাদক হিসেবে পেয়েছিলাম জহিরুল আহসান টিপু ভাইকে। অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। খুব ভাল লেগেছে তাঁকে।
এখানে একটা কথা না বললেই নয়। সেটা হলো, আমাদের সময়-এ চাকরিটা জোগার করে দিয়েছিলেন আজকের কাগজের উপসম্পাদকীয় পাতার দায়িত্বে থাকা সালাম সালেহ উদদীন ভাই। তিনি অসাধারণ ভাল মানুষ। নিয়মিত কলাম লেখার সুবাদে তাঁকে জানিয়েছিলাম- আমার চাকরির দরকার। তিনি তখন নাঈম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আমার ব্যবস্থাটা করেছিলেন।
যাই হোক, ভাল কাটছিল সময়। একেবারে নির্দিষ্ট তারিখে বেতন না পেলেও মাসের মধ্যে সেটা মিলছিল। রাতে গাড়ি দিয়ে বাসায় পৌছে দেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু বেশিদিন এবাবে চলেনি। হঠাৎ মালিক পক্ষের সঙ্গে নাঈম ভাইয়ের কী একটা সমস্যা তৈরি হলো। তখন তিনি বার্তা সম্পাদক টিপু ভাইকে অন্য কোথাও চলে যেতে পরামর্শ দিলেন। এরপর টিপু ভাই ভোরের কাগজে ঢুকে পড়লেন। বার্তা বিভাগে নতুন কোন নিয়োগ দেওয়া হলো না। এরইমধ্যে সবার বেতন আটকে গেল। আমিসহ অন্যরা তখন অসহায়ের মত বেতন ছাড়াই মাস দেড়েক-দুয়েক কাজ করলাম। সবমিলে আমাদের সময়-এ প্রায় দুই বছরমত কাজ করেছিলাম। এক পর্যায়ে নাঈম ভাইও দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন। তখন আবার বেকার হয়ে পড়লাম।
এভাবে চলতে চলতে একদিন রাজপথে দেখা জহিরুল আহসান টিপু ভাইয়ের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ের ভেতর তাঁর বিষয়-আমার বিষয় উঠে এলো। তিনি জানালেন, এখন দৈনিক ডেসটিনিতে বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। আমার বেকারত্ব জেনে তিনি একটা তারিখ দিলেন এবং বললেন, ওইদিন যেন আমি বায়োডাটা নিয়ে দেখা করি। তারপর গেলাম নির্দিষ্ট দিনে। সেখানে সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে তিনি আমার চাকরির ব্যবস্থা ঠিক করে ফেললেন। তাঁর অধীনেই আমার পদবী হলো 'কপি এডিটর’। সুন্দর একটা বসার জায়গা পেলাম, সঙ্গী হিসেবে পেলাম আরেক কপি এডিটরকে, যার সঙ্গে দৈনিক আমাদের সময়-এ একই রুমে কাজ করেছি। তিনি হলেন কবি হুমায়ন কবির। খুব ভাল মানুষ। অনেক দিন চীনে থেকে এসেছেন। আমাদের সময়-এ থাকতে থাকতেই তিনি চীনে গিয়েছিলেন। তারপর সেখানে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেই টিপু ভাইয়ের দেখা পেয়ে আমারমত ডেসটিনিতে ঢুকেছেন। তিনি আর আমি একই রুমে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম। তখন সময়টা ছিল ২০০৮-এর শেষার্ধ।
সুন্দর সময় কাটছিল। বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা ছিল না। কাজও ছিল নির্দিষ্ট। কপি সম্পাদনা এবং প্রয়োজন বোধে প্রথম বা শেষ পাতার মেকআপ করার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছিল। এখান থেকেও বাসায় পৌছার জন্য গাড়ি পাচ্ছিলাম। সবই ভাল ছিল।
কিন্তু ভাল সময়গুলো বোধহয় বেশিদিন যায় না। বিশেষ করে আমার বেলায় এটা বোধহয় নিয়তি। যদিও এসবে বিশ্বাসী নই, তারপরেও ঘটনা ঘটনাই। কোন কারণে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টিপু ভাইয়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটলো। তারপর হঠাৎ করেই তিনি পদত্যাগ করে আবার ভোরের কাগজে চলে গেলেন। এরপর বার্তা সম্পাদকের পদে এলেন নিজেক 'বিশাল কিছু’ মনে করা এক দাম্ভিক। বিএনপির মুখপত্র দৈনিক দিনকাল থেকে তিনি আসেন। এসে এমনকিছু ভূমিকা নেন, যার কারণে আমাদের বেশ কয়েকজনের এখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম পদত্যাগ করবো। সে অনুযায়ী, পদত্যাগ করেও ফেললাম। পরে জেনেছিলাম যার কারণে পদত্যাগ তিনিও বেশিদিন ওই কাগজে টিকতে পারেননি। তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
এরপরে যেটা ঘটলো সেটা অনেকটা অপ্রত্যাশিত হলেও, ছিল বহুল আকাঙ্ক্ষিত। হঠাৎ করেই দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক (তিনি সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় পাতার মূল দায়িত্বে ছিলেন) মুনীরুজ্জামান ভাই মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বললেন। তার আগে থেকে আমি নিয়মিত দৈনিক সংবাদ-এ কলাম লিখতাম। সেই সুবাদে তাঁরসঙ্গে সুসম্পর্ক।
জরুরি ভিত্তিতেই আমি তাঁরসঙ্গে দেখা করলাম। এরপর জানলাম তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হয়েছেন সদ্য। আমাকে তাঁর দক্ষিণহস্ত হিসেবে প্রয়োজন। কোন প্রশ্ন না করে তিনি দৈনিক সংবাদ-এ যুক্ত হতে বললেন। বলা যায়, তিনি আমার কোন কথাই শুনলেন না, 'আজ থেকে যুক্ত হলাম’ বলে লিখিত নিয়ে নিলেন। কোন পদে কতো বেতনে- ইত্যাদি কোন প্রশ্নই তিনি করতে দিলেন না। আমার জন্য অবশ্য একটা চাকরি জরুরি ছিল এবং দৈনিক সংবাদ ছিল আমার সবচেয়ে ভক্তি এবং পছন্দের সংবাদপত্র। কারণ এখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সবাই আমার চিন্তাধারার। সুতরাং বিনা শর্তে মুনির ভাইয়ের প্রস্তাব লুফে নিলাম এবং পরদিন থেকেই কাজে যোগ দিয়ে দিলাম।
বেতন ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু কী পদে কাজ করবো- তা নির্ধারণ করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে গেল। আপাতত বার্তা বিভাগের দেখাশুনা, তারপরে চূড়ান্ত হলো দায়িত্ব। মুনির ভাই জানালেন, একজন বার্তা সম্পাদক নেওয়ার কাজ চলছে, ন্যাশনাল ডেস্ক দেখার কেও নেই। এই ডেস্কের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলে তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন। কারণ অন্য কাউকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
তখন বুঝলাম ভেতরে ভেতরে বড় রকমের ঘটনা ঘটে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই সংবাদ ছেড়েছেন, আরও অনেকে ছাড়তে যাচ্ছেন। এমনকি শ্রদ্ধেয় মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ভাইও অফিস ছেড়েছেন। এই অবস্থায় সব দায়িত্ব নিতে হয়েছে মুনীর ভাইকে। আর এরজন্য তিনি বিশ্বস্তদের সঙ্গে চাইছেন। আমার জন্য সৌভাগের বিষয় সেটাই যে, তিনি আমাকে তাঁর বিশ্বস্ত মনে করেছেন।
আগেই বলেছি, সংবাদ ছিল আমার স্বপ্নের জায়গা। সেটা এভাবে মিলে যাবে- তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আর ন্যাশনাল ডেস্ক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে মুনীর ভাই আমাকে পুরো কর্তৃত্ব দিয়ে দিলেন। নিয়োগ, ছাটাই, বেতন সংক্রান্ত আলোচনা, ছুটি-ছাটা সমস্ত কিছু আমি করতে পারবো। সব ঠিক করে মুনীর ভাইকে দিয়ে শুধু আমাকে সেটা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message