দিগন্ত বিস্তৃত শোক
থেকে শক্তি
- আবুল হোসেন খোকন
দিনটি আকস্মিক ছিল না। বরং ছিল অনেক বেশি প্রলম্বিত। এর ক্ষেত্র প্রসারিত ছিল ভূ-গোলকের এ প্রান্ত থেকে ও
প্রাপ্ত পর্যন্ত। নেপথ্যে ছিল ভয়ঙ্কর জিঘাংসা এবং স্বার্থ। লক্ষ্য ছিল সুদূর প্রসারী। এক কথায় ৪৮
বছর আগের সেই ১৫ আগস্ট কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা
দলীয় বিবরে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি ছিল সা¤্রাজ্যবিস্তারকারী দানব শক্তির পুরো বলয় পর্যন্ত। লক্ষ্য একটাই, বিশ্বকে মুঠোয় পোড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী ছোট-বড়
শক্তিকে সমূলে বিনাশ করা।
বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই বাধা সৃষ্টির বড়
শক্তি। তাই দানব শক্তির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অগ্রযাত্রাকে নির্মূল করা। অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল একের পর এক বিজয়ের গৌরবে অভিষিক্ত হওয়া উজ্জ্বল সূর্যকে চিরতরে অস্তমিত করা। না-হলে এই সূর্য অনিবার্যভাবে গোটা বিশ্বকে আলোকে আলোকময় করে তুলবে। কবর রচনা করবে দানবের।
অতএব ষড়যন্ত্রের হিংস্র নখর বিস্তৃত হয়েছিল ভেতরে-বাইরে সবখানে। নানা ত্রুটি-বিচ্চুতির সূত্র ধরে এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রকে। তারপর ১৫
আগস্টের কালো রাতে হামলে পড়েছিল দানবের লেলিয়ে দেওয়া নরপিশাচের দলকে। ক্রিতদাস হিসেবে তারা প্রভূর আজ্ঞা পালন করছিল। নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল বাঙালি জাতির জনক এবং শোষণমুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দানবের লেলিয়ে দেওয়া নরপশুরা কৃতার্থ হওয়ার জন্য এখানেই থেমে থাকেনি। তারা পরিকল্পনামত বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবার এবং পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে খুঁজে খুঁজে বের করে পৈশাচিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অন্তঃসত্বা নারী, নাবালক শিশু- কাউকেই ওরা বাঁচতে দেয়নি। এমনকি জেলখানায় ঢুকেও তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। নরপশুদের এমন বর্বরতা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। স্বপরিবারে রাষ্ট্রনায়কসহ একসঙ্গে রাষ্ট্রের এতোগুলো শীর্ষ নেতা ও তাদের পরিবারকে কোথাও এভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেনি। এমন ভয়ঙ্কর নৃসংসতায় বিশ্ব বিবেকসহ দেশের গোটা মানুষ হতভম্ব, হতবিহ্বল এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। নেপথ্য দানব তখন অট্টহাসিতে অনবরত ফেটে পড়েছিল।
এই হাসির কারণ ছিল, এক লহমায় হাজার বছরের লড়াই-সংগ্রাম-আত্মত্যাগ আর একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি আদলে দাড় করানো সম্ভব হয়েছিল। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছিল ক্রীতদাসদের।
এ এক নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাস। কালের যাত্রায় দুঃসহ ঘটনা।
তারপর অনেক দিন গড়িয়েছে। সময় এগিয়েছে। দানবচক্র ভেবেছিল সিংহের জাতি দমে যাবে, আতঙ্কে নিঃশেষ হয়ে যাবে। প্রজন্ম ঘুমিয়ে থাকবে অনন্তকাল। কিন্তু না,
সময় হয়েছে অন্য রকম। ফল হয়েছে উল্টো। মাত্র ক’বছরেই লড়াকু জাতি গর্জে উঠেছে। বুকের রক্ত ঝরিয়েছে দফায় দফায়। বীরের জাতি বীরের মত লড়েছে দানব চক্রের বিরুদ্ধে। তাঁরা একের পর এক ছিনিয়ে এনেছে বিজয়ের পর বিজয়।
কবি অন্নদা শঙ্কর রায় তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, ‘যতোকাল রবে পদ্মা মেঘনা/ গৌরী যমুনা বহমান,/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান।/দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/রক্তগঙ্গা বহমান,/ নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়/
জয় মুজিবুর রহমান।’
সত্যিই কবির কথা সত্য হয়েছে। জয় হয়েছে বঙ্গবন্ধুর, জয় হয়েছে বাঙালির। জয়
হয়েছে বাংলাদেশের। জয় হয়েছে সংগ্রামী মানুষের, বিপ্লবী জনতার। অপরাজেয় বাংলাদেশ আজ সূর্যশক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। শোক থেকে এই সূর্যশক্তি এখন একের পর এক নতুন অগ্রযাত্রার ইতিহাস গড়ে চলেছে। দিগন্ত থেকে দিগন্তে বিস্তৃত হচ্ছে গৌরব। শত ষড়যন্ত্র আর অপতৎপতাকে কোনঠাঁসা করে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। শোক রূপ নিয়েছে শক্তির শপথে। এ শপথ কেবলই মানুষকে বিজয়ের গৌরবে অভিষিক্ত করে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message